তজুমদ্দিন প্রতিবেদক ॥ প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ায় ভোলার তজুমদ্দিনে সরকারি হাসপাতালটিতে রোগীদের নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কর্মরত চিকিৎসকরা। প্রতিদিন বহিঃবিভাগ ও অন্তঃবিভাগে সাড়ে ৪শত থেকে ৫শত রোগীকে নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও কর্মিরা। এই যখন হাসপাতালের অবস্থা তখন রোগীর সাথে আসা অন্তঃবিভাগে বহিরাগতদের নিয়ে আলাদা জামেলা পোহাতে হচ্ছে ডাক্তারদের। বহিরাগতরা একটু সচেতন হলে হাসপাতালের জনবল সংকটের মধ্যেও সেবা নিতে আসা রোগীদের যথেষ্ট সেবা দেয়ার মানষিকতা রয়েছে বলেও জানান চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে উপজেলায় বসবাসরত ৬০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়টি চিন্তা করে ৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এক সময় সরকারী হাসপাতালে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে হাসপাতাল বিমুখ হয়ে পড়েন। কিন্তু তজুমদ্দিনের কৃতিসন্তান ডা. আ.ফ.ম আখতার হোসেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর হাসপাতালটি চিকিৎসার পরিবেশ ফেরাতে থাকেন। একপর্যায়ে বদলি জনিত কারণে তিনি চলে যান ঢাকায়। এরপর ডা. কবির সোহেল তার স্থলাবিশিক্ত হয়ে অন্য ডাক্তারদের সহযোগীতায় রোগীদের যথাযথ পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা দিতে থাকেন। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে হাসপাতালটিতে দৈনিক গড়ে বহিঃবিভাগে সাড়ে ৩শত থেকে ৪শত রোগী দেখেন ৪জন ডাক্তার আর অন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকে গড়ে ৩৫ থেকে ৫০ জন রোগী। রোগীদের এমন চাপ তাদের সাথে আসা বহিরাগতদের কারণে মাঝে মধ্যে ডাক্তার, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মিরা হিমশিম খেলেও নিরলসভাবে দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। যে কারণে ৩১ শয্যার বাহিরের রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হয়। বিশেষ দিনের অন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের খাবারেও আনা হয়েছে পরিবর্তন দেয়া হচ্ছে বাড়তি খাবার।
চিকিৎসকরা তাদের পরিবার পরিজন রেখে জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে একজন ডাক্তারসহ ৭ জন ষ্টার্ফ করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালের আইসোলেশনে ১২জন করোনা রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও করোনার রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা। গত (৭ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বহিঃবিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের বিশাল লাইন। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররা নিরলসভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রোগীদের এমন চাপেও চিকিৎসকরা হাসপাতালে অফিস টাইমের বাহিরেও সময় দিয়ে রোগী দেখছেন। এযেন চিকিৎসকদের জন্য মরার উপর খড়ার খাঁ’র মতো।
হাসপাতালে ভর্তি শম্ভুপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ মো. আবুল কাশেম (৫৫) বরিশালটাইমসকে জানান, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ডাক্তার এসে খোঁজ খবর নেন এবং ঔষধপত্র দিয়ে থাকেন। আর খাবারের মানটাও মোটামুটি ভালো বলেও জানান এই রোগী।
হাসপাতালের নার্স ইনচার্জ সুপর্ণা রায় বরিশালটাইমসকে বলেন, অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে আমাদের কষ্ট হয়। তবুও রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে আমরা সবাই নিরলসভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এতোসবের মধ্যে বহিরাগত লোকজন অসচেতনভাবে ইনডোরে ঘুরাঘুরি করায় মাঝে মধ্যে সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতালের আর.এম.ও ডা. মোঃ হাসান শরীফ বরিশালটাইমসকে বলেন- ৩১ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে তাদের সাথে আসা আতœীস্বজনের কারণে আমরা মাঝে মধ্যে হিমশিহ খাচ্ছি। তবুও আমরা আমাদের মতো করে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি একদিন এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরোও বলেন, রোগীদের খাবারের গুণগত মান পরিবর্তন করে বিশেষ দিনে আইটেম বাড়ানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কবির সোহেল বরিশালটাইমসকে বলেন, ৩১ শয্যার হাসপাতালটিতেও জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে মাঝে মাঝে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হিমশিম কাটিয়ে উঠতে আউটসোসিংয়ের জনবল দিয়ে কাজ করানো হয় মাঝে মধ্যে। এছাড়া করোনা রোগীদের আমরা জীবনের ঝুকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। করোনার রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালের ডাক্তার ফারহান নাছিমসহ ৭জন ষ্টার্ফ করোনায় আক্রান্ত হন।’
Leave a Reply